
দ্যা ডেইলি নিউজ / ID/20 05 2020/TDNB/0019
করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিড়ি ও সিগারেটসহ সব ধরনের তামাক পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হলেও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম।
বুধবার (২০ মে) শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে তামাক শিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে।
এর আগে, তামাকপণ্যে করোনাভাইরাসে প্রাণনাশের বাড়তি ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করে দেশে বিড়ি-সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকপণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সোমবার (১৮ মে) শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না— জানতে চাইলে শিল্প সচিব আবদুল হালিম বলেন, আমরা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকপণ্য উৎপাদন, সরবরাহ বা বিপণণে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।
সচিব আরও বলেন, তামাক শিল্প স্বাভাবিকভাবে যেমন চলছিল, তেমনভাবেই চলছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তামাক পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি বন্ধ চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়কে পাঠানো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি—
Letter to Ministry of Industries Regarding Tobacco Product 19-05-2020এর আগে বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিলের সই করা এক বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে উদ্ধৃত করে তামাকজাতীয় পণ্য বিক্রিতে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে— বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ পেয়েছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব শুরু হলে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব জরুরি সেবা ও সরবরাহ শৃঙ্খল স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনী নির্দেশনাসহ পরিপত্র জারি করেন। এর আগে ২৪ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রেসনোটেও জরুরি সেবা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের উল্লেখ ছিল। ১৯৫৬ সালের The Control of Essential Commodities Act আইন অনুযায়ী সিগারেট অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হওয়ায় শিল্প মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময়ও তামাক কোম্পানির উৎপাদন সরবরাহ ও পরিবহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের উদ্দেশ্যের সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোনো ভিন্নতা নেই। শিল্প মন্ত্রণালয়ও প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার নীতিকে পূর্ণাঙ্গভাবে সমর্থন করে এ লক্ষ্যে কাজ করছে।
তবে তামাক শিল্পে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক চাষি ও শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সম্পর্ক, দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে অবদান, জাতীয় রাজস্ব আয়ে এই খাতের অবদান রয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই শিল্প হুট করে বন্ধ করে দেওয়া হলে একদিকে যেমন দেশ বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে, প্রান্তিক তামাক চাষিরাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও নেতিবাচক ধারণা ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য সতর্কতা জেনেই ধূমপায়ীরা ধূমপান করে থাকেন। সাময়িকভাবে এই শিল্প বন্ধ করে তাদের ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। বরং উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে এবং আমদানি করা সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের মাধ্যমে দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আয় হারাবে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে চাপে থাকা অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে তামাক শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট হওয়াসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ নিয়ে এটি আরও বেশি চাপ তৈরি করবে। এটা হবে জাতীয় মারাত্মক ক্ষতি।
সামগ্রিক বিবেচনায় তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তামাক শিল্প চালু রাখা, তথা বিড়ি-সিগারেট ও অন্যান্য তামাক পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি অব্যাহত রাখাতেই শিল্প মন্ত্রণালয় ‘যুক্তিসঙ্গত’ বলে মনে করছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। তবে ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্য সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলেও উল্লেখ করা হয় এতে।
এর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়কে পাঠানো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সোমবারের চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সাময়িকভাবে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করছে। এ অবস্থায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ পড়ার প্রত্যয় এগিয়ে নিতে সব তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয় চিঠিতে।